ভারত প্রতিনিধিঃ পশ্চিমবঙ্গের ত্রিবেণী অত্যন্ত পূণ্য ও পবিত্র স্থান। যুগ যুগ ধরে মুনিঋষিদের পদধুলিতে পবিত্র এই ছোট্ট শহরের আধ্যাত্মিক পরিমণ্ডলে গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাচীনকালে মুনিঋষিরা সাধনা করতেন এই ত্রিবেণী সঙ্গমে। জাফর খাঁ গাজী ১৩১৯ খ্রিষ্টাব্দে ত্রিবেণীর বিষ্ণু মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তরিত করে। সেই সময় থেকে কুম্ভস্নান ও মেলা বন্ধ হয়ে যায়। গঙ্গা (ভাগিরথী)র সাথে অপর দুই নদী যমুনা ও সরস্বতী নদী মিলিত ত্রিবেণীসঙ্গমে ৭০৩ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে কুম্ভস্নান। আজ ৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ত্রিবেণী সঙ্গম স্থলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হলো ১২ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি(শনি ও রবিবার) কুম্ভস্নান। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাঁশবেরিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান শ্রী আদিত্য নিয়োগী ও ভাইস চেয়ারম্যান শ্রী অমিত ঘোষ, ওম ক্লিং আশ্রমের জায়ানন্দ গিরি মহারাজ, বিশিষ্ট চিন্তাবিদ শ্রী মানস ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট সমাজ সেবক শ্রী সাধন মুখার্জি ও শ্রী শ্যামাঞ্জন শূর এবং এডভোকেট ব্রজেন রায় । আয়োজকরা জানান, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষনা পত্র ও অন্যান্য ইতিহাস থেকে জানা যায়, সেন রাজাদের পরবর্তী কালে ইসলামিক শাসনের সূচনা পর্ব থেকেই ত্রিবেণীর কুম্ভ স্নান বন্ধ হয়ে যায়। বাংলার গৌরব ফেরাতে হলে ফেরাতে হবে ত্রিবেণীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে। সেই সংকল্পে চেষ্টা শুরু হয় ১ বছর আগেই। উৎসাহ জুগিয়ে গেছেন বোষ্টন প্রবাসী কাঞ্চন ব্যানার্জি, নিউইয়র্ক এর শ্রীকান্ত মুখার্জি। এক বছর অনলস পরিশ্রমের সংগী সাধন মুখার্জি, ব্রজেন রায়, সমীর গুহ রায়, শ্যামাঞ্জন শূর। আর প্রথম থেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন বাঁশবেড়িয়া পুরসভার চেয়ারম্যান আদিত্য নিয়োগী আর ভাইস চেয়ারম্যান অমিত ঘোষ। অবশেষে আজ সাংবাদিকদের সামনে বাঁশবেড়িয়া পুরসভার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান দুজন কে পাশে বসিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষনার সৌভাগ্য হলো। ভারতের বিভিন্ন আখড়ার নাগা সন্ন্যাসী ও বিভিন্ন ঘরানার সাধুরা এই কুম্ভস্নানে অংশগ্রহণ করবেন। বাঁশবেড়িয়া পুরসভার চেয়ারম্যান আদিত্য নিয়োগী বলেন, পণ্ডিতশ্রেষ্ঠ জগন্নাথ তর্কপঞ্চাননের জন্মভিটে এই ত্রিবেণী। এখানে বহুমনীষি জন্ম লাভ করেছেন সিদ্ধিলাভ করেছেন। এবং মহাতীর্থ স্থান ত্রিবেণীর যে ঐতিহ্য এখানে কুম্ভস্নানে বহুমানুষের পদধুলী পরলে আমাদের এলাকার আরও উন্নতি হবে। অনুষ্ঠান সুচিতে রয়েছে,
১২ ফেব্রুয়ারী শনিবার সাধুসন্তদের ত্রিবেণীতে সমাগম।
১৩ ফেব্রুয়ারী রবিবার ভোর ৩-৩২ মিনিটে সমবেত শঙ্খধ্বনির মাধ্যমে শুরু হচ্ছে।
সকাল ৭টায় শঙ্খনাদ ও আদিত্য হৃদয় স্তোত্রের মাধ্যমে সুচনা।
সকাল ৮-৫৬ মিনিট পর্যন্ত মহাপূণ্যস্নান।
দুপুর ১২-৪১মিনিট পর্যন্ত পবিত্র স্নান।
সন্ধ্যায় গঙ্গা আরতি ও মহাপ্রসাদ বিতরণ এবং আশ্রমে আশ্রমে ভজন কীর্তন অনুষ্ঠান।
পবিত্র স্নানে আগত সকল পূণ্যার্থীদের জন্য রয়েছে বিশেষ নির্দেশনা।
১। কুম্ভস্নানে আগত সকল পূণ্যার্থী নিজের সচিত্র পরিচয়পত্র সঙ্গে আনবেন।
২। প্রত্যেকে কোভিট বিধি ও কোভিট প্রোটোকল মেনে চলবেন।
৩। আসার সূচনা আগেই আয়োজকদের জানিয়ে দেবেন।
৪। সমস্ত সরকারি নিয়মকানুন ও বিধিনিষেধকে সম্মান জানাবেন।
৫। ভোর বেলায় পবিত্র স্নানের ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ মেনে চলবেন।
সৌজন্যে: দ্য নিউজ